শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
বিনোদন ডেস্ক।।
আপনাদের কি মনে আছে ‘তুম বিন’ ছবির মিষ্টি হাসির সুন্দরী সেই নায়িকা ‘পিয়া’কে? প্রথম ছবিতে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েও যিনি রূপালি জগত থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। যাকে দেখার জন্য ভক্তরা অপেক্ষায় থাকলেও তিনি ফিরে আসেননি বলিউডের রুপালি জগতে। সেই ‘পিয়া’ এখন কোথায়? কি করছেন? কি কারণে সরে গিয়েছিলেন বলিউড থেকে? তাতে কি সফল হয়েছেন তিনি?
‘তুম বিন’-এর পিয়া বাস্তবে সোন্দালি সিন্হা। ফিল্ম জগতে স্বপ্নের শুরু বলতে যা বোঝায়, তা-ই হয়েছিল সোন্দালির সঙ্গে। প্রথম ছবিতেই কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার পর আর একটিও হিট ছবি দিতে পারেননি সোন্দালি। তাই নিজ ইচ্ছায় সরে গিয়েছিলেন বলিউড থেকে। তবে সোন্দালি এখন এক জন সফল ব্যবসায়ী। দেশের সবচেয়ে বড় বেকারির মালিক তিনি। সম্প্রতি ‘তুম বিন’ ছবির সিক্যুয়েলে অতিথি শিল্পী হিসেবে হাজির হয়ে তিনি জানিয়েছেন বলিউড থেকে তার মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার কারণ।
স্বজনপ্রীতির অভিযোগে বিধ্বস্ত বলিউডে স্বপ্নের ডেবিউ সাধারণত তারকা সন্তানদেরই হয়ে থাকে। নিন্দুকেরা এমনটাই বলে থাকেন। সোন্দালিকে সেই ধারার ব্যতিক্রম বলা যেতে পারে। তিন জন নায়কের বিপরীতে এক জন নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। ছবিও ব্লকবাস্টার হিট। অথচ সোন্দালির কোনও তথাকথিত ফিল্মি যোগাযোগ ছিল না। বাবা ছিলেন ভারতীয় বিমানবাহিনীর অফিসার। পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই হয় চিকিৎসক নয় বিমানচালক। সোন্দালি নিজেও অভিনয়ের কথা ভাবেননি। বরং তিনি ঠিক করেছিলেন চিকিৎসক হবেন।
সোন্দালি জানান, ছোটবেলাতেই বাবাকে হারিয়েছিলেন সোন্দালি। কর্তব্যরত অবস্থাতেই মৃত্যু হয় তার বাবার। সোন্দালি এবং তার বোনকে একাই মানুষ করেছিলেন তাদের মা। বড় হয়ে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন তখনও ছিল। কিন্তু সেই ইচ্ছে বদলে যায় কলেজে পড়ার সময়। নেহাতই শখে দু’এক বার হেঁটেছিলেন র্যাম্পে। তাতেই মডেলিংয়ে উৎসাহী হন। সোন্দালি তখন দিল্লির জেসাস অ্যান্ড মেরি কলেজের ছাত্রী। পড়াশোনা শেষ করে কিশোর নমিত কপূরের অভিনয়ের স্কুলে ভর্তি হয়ে যান।
‘তুম বিন’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়ার আগে মাত্র একটি মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেছিলেন সোন্দালি। সোনু নিগাম-এর প্রথম গানের অ্যালবাম ‘দিওয়ানা’-র জন্য নতুন মুখের খোঁজ করছিলেন পরিচালক অনুভব সিংহ। সেটাই ছিল সোন্দালির প্রথম কাজ। পরে ‘তুম বিন’ ছবির নায়িকার চরিত্রের জন্যও সোন্দালিকেই বেছে নেন অনুভব। তিনিই ছিলেন ছবির পরিচালক।
‘তুম বিন’-এর গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র পিয়া। তারই জীবনের নানা ওঠা পড়া নিয়ে কাহিনী। পিয়ার চরিত্র রাতারাতি বিখ্যাত করে তোলে সোন্দালিকে। ভারতীয় সিনেমার দর্শকরা প্রথম ছবিতেই ভালবেসে ফেলেন তাকে। কিন্তু তার পর আর একটিও হিট ছবি দিতে পারেননি সোন্দালি। বলিউড ছেড়ে ভাগ্য পরীক্ষা করে দেখেছিলেন ভারতের দক্ষিণী ছবিতেও। কিন্তু সেখানেও হিট ছবির দেখা মিলেনি। অথচ তত দিনে তার করা একটি ছবি জাতীয় পুরষ্কার পেয়েছে। প্রশংসিত হয়েছে সোন্দালির অভিনয়ও।
২০০৫ সালে শেষ ছবি করেন সোন্দালি। সেই ছবিও হিট না হওয়ায় অভিনয় থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ওই বছরই বিয়ে করেন এক ব্যবসায়ীকে। নাম কিরণ সালাসকর। পরের ১৫ বছরে অনেকেই ভুলতে বসেছিলেন সোন্দালিকে। মনে করিয়েও দেন তিনি নিজেই। ‘তুম বিন’ ছবির সিক্যুয়েলে অতিথি শিল্পী হিসেবে হাজির হন তিনি। তবে একই সঙ্গে জানিয়ে দেন অভিনয়ে ফেরার ইচ্ছে নেই তার।
তত দিনে তিন সন্তানের মা হয়েছেন সোন্দালি। ব্যবসায়ী স্বামীর বেকারির ব্যবসা কাঁধে তুলে নিয়েছেন। মন দিয়েছেন নতুন কাজে। ভারতের সবচেয়ে বড় বেকারি কান্ট্রি অফ অরিজিন। সোন্দালি সেটার। এ ছাড়া মুম্বাইয়ে একটি স্পা-ও রয়েছে তার।
তবে সফল হলেও রঙ্গিন দুনিয়ায় নিজেকে মেলে ধরতে পছন্দ করেন না সোন্দালি। তার বেকারি ভারতের সবচেয়ে বড় বেকারি হতে পারে কিন্তু সেই সাফল্যের কৃতিত্ব ফলাও করেন না তিনি। নেটমাধ্যমে সক্রিয় হলেও তার সব অ্যাকাউন্টই ব্যক্তিগত। সবাইকে সেখানে উঁকি দেওয়ার সুযোগও দেননি সোন্দালি। এক সময়ে পর্দায় নিজেকে মেলে ধরতে চেয়েছিলেন সোন্দালি কিন্তু এখন আড়ালের সঙ্গেই সবচেয়ে বেশি ভাব জমিয়েছেন তিনি।